লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ (৪৫) সহধর্মিণী সেলিনা বেগমের (৪০) বিরুদ্ধে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট, সাধারণ আঘাতদান, জোর করে সাদা (ফাঁকা) স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করার অভিযোগে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাতে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে লালমনিরহাটে সংঘটিত এ সংক্রান্ত ঘটনার সময় ও তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা এবং চলতি বছরের ১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহার ও লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তার সহধর্মিণী সেলিনা বেগমের সাথে ঘর সংসার করাকালে তাকে (মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ)কে বিভিন্ন কায়দায় বিপদের মুখোমুখি করে টাকা আদায় করে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকেন। স্বামী মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ স্ত্রী সেলিনা বেগমের অপকর্মে বাধা প্রদান করলে স্ত্রী স্বামীকে মারপিট করাসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয় যে, স্বামী মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ স্ত্রী সেলিনা বেগমের সাথে ঘর সংসার করার সময় জানতে পারেন যে ইতিপূর্বে তার স্ত্রীর একাধিক বিবাহ করে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ মিথ্যা মামলা টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। অনেকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে টাকা আদায় করেছে। এ বিষয় গুলো স্বামী মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ জানার পর স্ত্রীকে সংশোধন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয় যে, স্ত্রীর সাথে স্বামীর ঘর সংসার করাকালে চলতি বছরের ৩ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে লালমনিরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রমে থাকার সময় স্বামীকে ফেনসিডিল এনে দিতে বললে, স্বামী মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ এতে রাজি না হলে শিল্পকলা একাডেমির স্টাফদের সামনেই স্বামীকে মারপিটসহ শার্টের কলার ধরে টানা হেচড়া করে। এরপর চলতি বছরের ১১ জুলাই স্ত্রী সেলিনা বেগম তার স্বামীকে আবারও ফেনসিডিল এনে দিতে বললে স্বামী আবারও না বললে তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে স্ত্রী কিছুটা শান্ত হলে তাকে বরিশালের বাসায় রেখে আসেন। এরপর চলতি বছরের ৩১ জুলাই স্ত্রী সেলিনা বেগমকে স্বামী মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ তার আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে পরামর্শ করে এক তরফা তালাক প্রদান করে তালাক রেজিস্ট্রি করেন স্বামী।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয় যে, এক তরফা তালাকের বিষয়টি জানার পর স্ত্রী সেলিনা বেগম চলতি বছরের ১ আগস্ট সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে স্বামীর বর্তমান কর্মস্থল লালমনিরহাটের বাসায় এসে তাকে তালাক প্রদানের কারণ কি জিজ্ঞেস করেন। এ সময় সেলিনা বেগম তার স্বামী মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন ও স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে শ্বাসরোধ করাসহ গলা চিপে ধরে দেওয়ালের সাথে স্বামীর মাথা চেপে ধরে মাথায় আঘাত করেন। এক পর্যায়ে বাসার রান্না ঘর থেকে ধারালো বটি/ দাও এনে হত্যা করার হুমকি ধামকি দিয়ে স্বামীকে লেখা বিহীন সাদা কাগজে স্বামীকে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন।
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ নূরনবী বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লালমনিরহাট জেলা কালচারাল অফিসার মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদকে তার স্ত্রী সেলিনা বেগম লালমনিরহাটের বাসায় শারীরিক ভাবে একাধিক বার লাঞ্চিত করছেন, ঘটনার সময় উপস্থিত অন্যরা সেলিনা বেগমকে থামানোর চেষ্টা করছেন, এমন একটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। এর পাশাপাশি মোহাম্মাদ হাসানুর রশীদ স্ত্রী সেলিনা বেগমের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। প্রাথমিক খোঁজ খবর নিয়ে এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সার্বিক বিষয়টি উল্লেখ করে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় লিখিত অভিযোগটিকে নিয়মিত মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।